সংস্কারের নামে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বন্ধ রাজধানীর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ শিশুপার্ক। আর সায়েদাবাদের ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক দখল করে রাখা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের গাড়ি। কবে শেষ হবে সংস্কার কাজ কিংবা অন্যগুলোর কী পরিণতি হবে, সে তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছেই। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, উন্নয়নে নামে বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ রাখার দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
নিজস্ব প্রতিবেদক,
ইট-কাঠ আর কংক্রিটের নগরী ঢকায় বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু সবুজের প্রয়োজন, তা দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকায়নের চাপে। স্বাস্থ্যকরভাবে বেঁচে থাকায় নির্মল পরিবেশের খোরাক মেটানো পার্কগুলোও যেনো বিলীন হওয়ার পথে এই মেগাসিটিতে।
শিশু তো বটেই, নানান বয়সি মানুষের কোলাহলে মুখর থাকা এক সময়ের প্রাণবন্ত শিশু পার্কটিতে এখন সুনসান নীরবতা। কারণ প্রায় ছয় বছর ধরে ঢিমেতালে সংস্কার চলছে সেখানে। ফলে পরিত্যক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে পার্কটি।
সংস্কারের নামে অযত্নে পড়ে আছে পার্কের রাইডগুলো। জানা গেছে, ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংস্কার। কবে শেষ হবে কাজ, তাও জানা নেই কর্তৃপক্ষের।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন,
“আধুনিকায়নের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছিলাম। তবে এর মধ্যে অনেক জটিলতা ছিল। গাড়ির ডাম্পিং স্টেশন আছে। ওই গাড়িগুলো সরিয়ে শিশুপার্কের জন্য নেয়ার চেষ্টা চলছে।”
শুধু শিশুপার্কই নয়, সায়েদাবাদের ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কটিও করুণ অবস্থায় ধুঁকছে। পার্কের জায়গা দখল করে রাখা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের গাড়ি। একই অবস্থা সোনারগাঁও মোড়ের পান্থকুঞ্জ নামে বহুল জনপ্রিয় পার্কটির। এদিকে ফার্মগেটের শহীদ আনোয়ারা পার্কটির জায়গা দখল করে তৈরি হয়েছে দোতলা মেট্রোরেলের অফিস, রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ২৭টি পার্ক, আর উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ২৩টি, যার অধিকাংশই ব্যবহার করার মতো নয়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, সংস্কার কাজ দ্রুতই শেষ করা উচিত।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ বলেন,
“বিভিন্ন প্রকল্পের নামে যেসব বিনোদনকেন্দ্র আটকে আছে, সেগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। উন্নয়নের নামে পার্কে তালা লাগিয়ে মানুষকে বন্দি করে রাখার দায়টা রাষ্ট্রকে নিতে হবে।”
সুস্থ-সবল নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে শুধু মানসম্মত আবাসনই নয়, সংস্কারের পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে যুগোপযোগী বিনোদন ব্যবস্থার দিকেও। পরামর্শ পরিকল্পনাবিদদের।