তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছয় মাস করার প্রস্তাব

Reporter Name / ৯ Time View
Update Time : শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক,

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে এর মেয়াদ ছয় মাস করা ও রাষ্ট্রধর্ম বাতিল এবং বিকেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। সংবিধানে নানা জাতি, ধর্ম ও ভাষার স্বীকৃতির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ দেন তারা। সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে এমন পরামর্শ দিয়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব অযোগ্য বিধান কঠোরভাবে মেনে চলার কথাও বলেন।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের ক্যাবিনেট কক্ষে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ উঠে আসে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা কোনো ব্যক্তি যাতে অংশ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সংবিধানে কঠোর নির্দেশনা থাকার কথা বলা হয় সভায়। এ ছাড়া সংসদের মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করা এবং দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিধান সংবিধানে যোগ করার সুপারিশও করেন তারা।

সংস্কার কমিশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সংবিধান সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতামত দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ডা. জাহেদ উর রহমান, সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, মুফতি সাইফুল ইসলাম ও মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম।

এ সময় কমিশনের পক্ষে কমিশনপ্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী ও ফিরোজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে কমিশন।

সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে আদিবাসী জাতিগুলোর নাম ও তাদের ভাষা সংবিধানে উল্লেখ করতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে কমিশনের প্রতি পরামর্শ দেন বিশিষ্টজন। তারা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে সংবিধানে সুস্পষ্ট ঘোষণার কথা বলেন। এ ছাড়া সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত এবং নারী আসনেরক্ষেত্রে ইন্টারসেকশনালটির বিষয়টি বিবেচনার কথা বলেন, যাতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির নারী যেমন দলিত, চা শ্রমিক, হরিজন, আদিবাসী নারী কিংবা হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

সূত্র আরও জানায়, আলী রীয়াজ নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দেয় সুজন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রস্তাবটি জমা দেন। সুজনের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারও এ সময় ছিলেন। প্রস্তাবে সুজন আগের মতো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের সুপারিশ করলেও এতে বিচার বিভাগকে যুক্ত না করার সুপারিশ করেছে। সংসদের আসন সংখ্যা ৫০টি বাড়িয়ে ৪০০ করার প্রস্তাব করেন তারা। এর মধ্যে ১০০টি নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার সুপারিশ করেছে। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করে উচ্চকক্ষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের কথা বলেছে সংগঠনটি।

কেউ দুবারের বেশি যেন প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন, তা সংবিধানে যুক্ত করা এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করার কথাও বলেছে সুজন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করে সংসদ সদস্যদের দলের বিপক্ষে যাওয়ার পথ খোলা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে আস্থা ভোট ও বাজেট পাসের ক্ষেত্রে ফ্লোর ক্রসিং নিষিদ্ধ রাখার পক্ষপাতি সুজন, অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা চায়, দলের প্রস্তাবের সমালোচনাসহ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটদানের সুযোগ যেন উন্মুক্ত থাকে।

সংখ্যানুপাতিক নাকি বর্তমান পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে সুজন মিশ্র পদ্ধতির প্রস্তাব করে। সেক্ষেত্রে সমগ্র দেশকে ২০০ আসনে ভাগ করে ওই আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচন এবং অবশিষ্ট ২০০ আসন ভোটপ্রাপ্তির শতকরা হার অনুযায়ী বণ্টন করা যেতে পারে বলে মত দেয় তারা। দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দেশের বর্তমান সংবিধানে থাকা পুরুষতান্ত্রিক ভাষা ও শব্দ বাদ দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছে সুজন।

সূত্র জানায়, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সংবিধান ফের লিখনের বিরোধিতা করে সংশোধন ও সংযোজনের পরামর্শ দেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনঃস্থাপন এবং একই ব্যক্তি যাতে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা খর্ব করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্যের পরামর্শ দেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুদক, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনপ্রধানের নিয়োগের স্পষ্ট বিধান সন্নিবেশিত করার পরামর্শ দেন।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসসহ আরও কয়েকজন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম না রাখার পক্ষে মত দেন।

সংস্কার কমিশনের কাছে দেওয়া মতামত সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, আমরা বিকেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার কথা বলেছি। কথা বলেছি নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণার কথা বলেছি।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সংবিধান হবে জনগণতান্ত্রিক। সেজন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাদ দিয়ে জনগণতান্ত্রিক করার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ, রাষ্ট্রপতির মধ্যে পতি অর্থ স্বামী, আমরা চিন্তাই করিনি যে নারী রাষ্ট্রপতি হতে পারে। এটা সামন্ততান্ত্রিক চিন্তা। কারণ, জনগণ প্রজা হবে কেন?

তিনি বলেন, নারী প্রতিনিধিত্বকে আরও ইন্টারসেকশনালি করার পক্ষে বলেছি যাতে দলিত, চা বাগানের শিক্ষিত নারীরা জায়গা পায়, যাতে প্রত্যেকটা জায়গায় প্রতিনিধিত্ব হয়।

জোরালোভাবে আদিবাসী জাতিগুলোর নাম ও তাদের ভাষা উল্লেখ করার দাবি করেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও ভাষার স্বীকৃতির বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেনবহুত্ববাদ প্রতিফলিত হয়। দ্বৈত নাগরিকত্ব অযোগ্য বিধান কঠোরভাবে মেনে চলার কথাও বলেছি। বলেছি, রাষ্ট্র আর ধর্মের বিযুক্তির কথা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *