মোঃ জাকির হোসেন,
যশোরের ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মী পিয়াল হাসান (২৮) হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনকে র্যাব এবং দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আটককৃতরা হলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের কামারুল ইসলামের ছেলে ঝিকরগাছা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজা (৩২), একই এলাকার নজরুল ইসলাম নজুর ছেলে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা মেহেদী হাসান (২৪), মনিরুল ইসলাম মনির (৩৭) ও তুষার হোসেন (৩১)। মঙ্গলবার সকালে র্যাব-৬ কার্যালযে ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার ফ্লাইট লে. রাসেল সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ৯ নভেম্বর দেড়টার দিকে নিহত যুবদল কর্মী পিয়াল বাজারে কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পৌরশহরের মিতালী হলরোডস্থ এলাকায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্য বোমা নিক্ষেপ করে আসামিরা। এসময় নিহত পিয়াল প্রাণ বাঁচাতে ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করলে সেখানে আসামিরা দা’সহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিয়ালের গলায়, হাতে পায়ে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে, মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে মামলাটি নিয়ে ছায়া তদন্তে নামে র্যাব-৬ সদস্যরা। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করে অভিযান পরিচালনা করে। ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার ফ্লাইট. লে. রাসেল জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি শামীম রেজা ঢাকার উদ্দেশ্য পালানোর জন্য, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে যায়। সেখান থেকে তাকে আটক করা হয়। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা মেহেদী হাসান ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সিমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও মূলত ছাত্রদল নেতা শামীমের পরিবারের সঙ্গে নিহত পিয়ালের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান। এই কর্মকর্তা, বাকী আসামিদের আটকের অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি। এর আগে সোমবার সকালে বেনাপোল সীমান্ত ও মোবারকপুর গ্রাম থেকে আরো দুই আসামি আটক করে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ। সোমবার সকালে বেনাপোল থেকে মনিরুল এবং মোবারকপুর থেকে তুষারকে আটক করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিকরগাছা থানার ওসি বাবলুর রহমান খান। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ঝিকরগাছা বাজারে আধিপত্যের বিস্তার নিয়ে পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শামীম রেজার সঙ্গে যুবদলের কর্মী পিয়াল হাসানের বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে পিয়ালের নেতৃত্বে কয়েকজন শামীমের বাবা কামরুল ইসলামকে ছুরি মেরে জখম করেন। ঐ ঘটনায় একটি মামলা হয়। ঐ মামলায় পিয়ালসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। দেড় মাস কারাভোগ করে গত ৮ নভেম্বর জামিনে মুক্ত হোন তারা। পরদিন ৯ নভেম্বর পিয়াল রেল স্টেশন এলাকায় শামীমের কাছে গিয়ে ঐ ঘটনার জন্যে ক্ষমা চান। এ সময় শামীম তার সহযোগীদের মুঠোফোনে ডেকে পিয়ালকে ধাওয়া দিয়ে বোমা মেরে ও কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত পিয়ালের ভাই সুমন হাসান বলেন, পারিবারিক বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। শামীমের বাবা আহত হওয়ার ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে পিয়াল শনিবার দুপুরে শামীমের কাছে মাফ চাইতে যায়। কিন্তু শামীম মাফ না করে তার লোকজন ডেকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করেছে। আমরা খুনিদের ফাঁসি চাই। নিহত পিয়াল ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর বিশ্বাসপাড়া এলাকার কিতাব আলীর ছেলে। তিনি ঝিকরগাছা বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন। তার চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এই ঘটনায় ঘটনার দিন রাতে নিহত পিয়ালের বাবা কিতাব আলী বাদী হয়ে ঝিকরগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঝিকরগাছা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক শামীম রেজাসহ ১০ জনের নাম পরিচয় উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়। এদিকে, হত্যাকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে উপজেলা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজার সম্পৃক্ততার অভিযোগে শামীমকে বহিস্কার করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। গত ৯ নভেম্বর রাতে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।