আব্দুর রউফ মান্নান ১৯৫০ সালের ১৯ আগস্ট নওগাঁর পত্নীতলা থানার আমাইপুকুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। মা হাফেজান বেগম। পিতা সিরাজুল হক। চার বছর বয়সে পিতার অকাল মৃত্যুর পর পিতামহ ডা. আব্দুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সুবরাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রউফ মান্নানের পড়ালেখায় হাতেখড়ি। ১৯৭৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন আব্দুর রউফ মান্নান ১৯৭১ সালে ৭ নং সেক্টরে এমদাদুর রহমানের নিকট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন । মুক্তিযোদ্ধা ক্রমিক নং- DG-110013 |
ছাত্র রাজনীতিঃ রউফ মান্নান ১৯৭২ সালে জগন্নাথ কলেজ (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) বি. আর হল শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি: আব্দুর রউফ মান্নান ১৯৭৬ সালে পত্নীতলা থানার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেসময় রাজশাহী অঞ্চলে তিনিই ছিলেন একমাত্র কমবয়সী জনপ্রিয় চেয়ারম্যান। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। রউফ মান্নান ১৯৭৭ সালে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার একমাত্র চেয়ারম্যান হিসেবে শিক্ষা সফরে থাইল্যান্ড গমন করেন।
সামাজিক কর্মকাণ্ড : আব্দুর রউফ মান্নান ১৯৭৮ সালে নিজ গ্রাম আমাইপুকুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। রউফ মান্নান ১৯৯৫ সালে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে কৃষ্ণপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তা ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হয়। তিনি পত্নীতলা উপজেলা পরিষদের সীমান্ত চোরাচালান নিরোধ কমিটির সদস্য ছিলেন।
রাজনৈতিক অবস্থান: আব্দুর রউফ মান্নান ১৯৭৮ সালে জাগদলে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে পত্নীতলা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন। তিনি ১৯৯২ সালে পত্নীতলা থানা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। রউফ মান্নান ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধামুইরহাট-পত্নীতলা নওগাঁ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে বিকল্পধারার প্রার্থী ছিলেন ।
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান: আব্দুর রউফ মান্নান ২০০৪ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ভিন্নধারার রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এ যোগদান করেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিকল্পধারার রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিকল্পধারা কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রউফ মান্নান ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিকল্পধারা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে তিনি বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম মেম্বার নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালের ৮ আগষ্ট পদত্যাগ করেন। একই বছরে তিনি মাহমুদুর মান্নার নাগরিক ঐক্য-তে যোগদান করেন। বর্তমানে নাগরিক ঐক্য’র প্রেসিডিয়াম মেম্বার পদে বহাল রয়েছেন।
আব্দুর রউফ মান্নান বিবাহিত এবং এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক। তিনি তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র ধামুইরহাট- পত্নীতলা এলাকায় একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ও সমাজসেবী হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
ভূমিকা
মনের জানালায় হাত রেখে স্মৃতিসাগরে ভেসে গেলাম। তুলে নিলাম ফেলে আসা কিছু নুড়ি-বালি, যেখানে সন্ধান করেছি মনি-মুক্তার। আমি প্রথাসিদ্ধ লেখক নই। কেবল মনের তাগিদে এই পথচলা। সেই সাথে বন্ধু-স্বজনদের উৎসাহে-অনুরোধে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বাস্তবচিত্র নিয়ে ‘ছেঁড়াস্মৃতি’র পাতাগুলো জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। ডালি সাজিয়েছি আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং জীবন সায়াহ্নের টুকরো টুকরো ঘটনার বিন্যাস আমার মনের মধ্যে লালন করা দীর্ঘদিনের না বলা কথা ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছি। আর এই কাজটি যে খুব অনায়াসেই সম্পন্ন করতে পেরেছি তা নয়, এর জন্য আমাকে দিন-মাস-বছর পার করতে হয়েছে পাল ছেঁড়া নাবিকের মতো। সব গ্রন্থই রচিত হয় তার একটা নিজস্ব জীবন ও ইচ্ছাকে কেন্দ্র করে। বেদনা ও আবেগ কি আলাদা করা যায়? বাস্তব সরল স্বীকারোক্তিমূলক এই স্মৃতিগুলোকে কাঁচা মাটির ছাঁচে ঢেলে পুড়িয়ে বইয়ের রূপ দেয়ার দুরূহ কাজটি করার চেষ্টা করেছি। এতে ভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক।
গ্রন্থটি আত্মজৈবনিক গোত্রের হলেও এখানে আমি তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, জেনারেল এইচএম এরশাদ, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। একমাত্র ভাষা আন্দোলন ছাড়া আর সব আন্দোলনেই আমি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছি। কোনো রাজনৈতিক পরিবারে আমার জন্ম না হলেও স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। সেই থেকে রাজনৈতিক মাঠে আমার পদচারণা। আমি চেষ্টা করেছি তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিকে তুলে ধরার, চেষ্টা করেছি ষড়যন্ত্রের রাজনীতির খণ্ডখণ্ড চিত্রকে উন্মোচন করার।
এ ছাড়াও ‘ছেঁড়াস্মৃতির অন্তরালে রয়েছে- শিক্ষা সফরে থাইল্যান্ড ভ্রমণসহ আমার জীবনের নানা কথামালা। আমি জানি না ‘ছেঁড়াস্মৃতি’ পাঠক হৃদয়ে কিভাবে কতটুকু স্থান দখল করতে পারবে। তবে দ্বিধাহীন চিত্তে একথা বলতে পারি- আমার এই গ্রন্থটি সমাজে একটি অংশের জন্য প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে। এই কাজে আমি প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম ও কবি ওয়াসিমুল ইসলামের উৎসাহ পেয়েছি, তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না বরং কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করলাম ।
লেখক পরিচিতিঃ
আব্দুর রউফ মান্নান
রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী পর্ব -১